“আমদানি করা অন্য ফলে ভ্যাট বাড়ানোর সুযোগে খেজুরের দাম বেড়ে গেছে। রোজা আসতে আসতে আরও বাড়তে পারে”, বলেন বিক্রেতা নাজমুল হোসেন।
Published : 08 Feb 2025, 12:10 AM
রোজা আসতে আরও সপ্তাহ তিনেক বাকি থাকতেই বেড়ে গেছে খেজুরের দাম। চাল-তেলের বাজার আগে থেকেই চড়া; ভোক্তাদের অসন্তোষ গুঁড়ো দুধ ও ‘ইন্সট্যান্ট পাউডার ড্রিংকসের’ দাম নিয়েও।
রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোর বিক্রেতারা বলছেন, অনেক দিন ধরেই বোতলজাত সয়াবিন তেল ঠিকঠাক বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার পাওয়া গেলেও কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে। সয়াবিনের সঙ্গে অন্য পণ্য কেনার শর্ত জুড়ে দেওয়ার অভিযোগও আছে।
শুক্রবার ছুটির দিনে মহাখালী কাঁচাবাজারের মাসুমা জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা আল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সয়াবিন তেলের আধা লিটারের বোতল পাওয়া যাচ্ছে না। এক লিটারের বোতলও কম।
“তেলের অর্ডার দেওয়ার পর ডিলার আমাকে তাদের কোম্পানির লবণ ধরিয়ে দিয়েছে। ওই কোম্পানির লবণ আমার দোকানে তেমন চলে না। তবুও কিনতে হচ্ছে। কারণ তেল তো লাগবে।”
নিকেতন কাঁচাবাজারের রিপা স্টোরের বিক্রেতা ফারুক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সয়াবিনের বোতল তো পাই-ই না। আর পেলেও গায়ের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। তাই শুধু খোলা সয়াবিন বিক্রি করছি।”
সয়াবিন তেলের বাজার স্বাভাবিক করতে দাম বাড়িয়েও কাজ হয়নি। বাজারে এখনও সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।
এ বাজারে আসা ক্রেতা মামুন খন্দকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত দুই-আড়াই মাস ধরেই বোতলের সয়াবিন তেলের সংকট। বড় কোম্পানির হাতে জিম্মি সাধারণ মানুষ।
“মাঝে কয়েক দিন একটু সরবরাহ বাড়লেও এখন আবার সংকট। দুই-এক দোকানে পেলেও গায়ের দামের থেকে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে। রোজার আগে হয়ত আবার দাম বাড়ানোর জন্য এমনটা করছে।”
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, খুচরা বাজারে শুক্রবার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ থেকে ১৮২ টাকায় বিক্রি হয়, যা এক সপ্তাহ আগে ১৭৪ থেকে ১৭৫ টাকায় পাওয়া যেত। এক মাস আগে ছিল ১৬৩ থেকে ১৬৫ টাকা।
টিসিবির প্রতিবেদনে পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৮৫০ থেকে ৮৫২ টাকা ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৩৪৮ থেকে ৩৫০ টাকা বিক্রি হওয়ার তথ্য দেওয়া হয়।
তবে ভোক্তাদের অভিযোগ, গায়ের দামের চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে তেল কিনতে হচ্ছে তাদের।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ৯ ডিসেম্বর ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছিল। সে অনুযায়ী, বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি আট টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৪৯ থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা এবং খোলা পাম অয়েলের দাম লিটার প্রতি ১৪৯ থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়।
এছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৮১৮ থেকে বাড়িয়ে ৮৬০ টাকা করা হয়।
বেড়েছে ‘রোজার পণ্যের’ দাম
এদিকে রোজার আগে বেড়েছে প্যাকেটজাত দুধ, ইন্সট্যান্ট পাউডার ড্রিংকস, সস ও খেজুরের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, সরকার নতুন করে ভ্যাট বাড়ানোর পর এসব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।
বিক্রেতা আল আমিন বলেন, “ভ্যাট বাড়ার পরই ট্যাংয়ের (ইন্সট্যান্ট পাউডার ড্রিংক) দাম বেড়ে গেছে। কয়েক দিন আগেও আড়াই কেজির ট্যাং ১১০০ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন গায়ের দাম ১৪০০ টাকা। আমরা বিক্রি করি ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা।
“৭০০ গ্রাম, দেড় কেজি সাইজেরগুলোতেও ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে জারপ্রতি। আর প্যাকেটজাত দুধে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে কেজিতে। বোতলপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা দাম বেড়েছে সসের।”
এদিকে রোজার আগে বরাবরের মত খেজুরের দামও বেড়েছে। যদিও কর-শুল্ক কমিয়েছে সরকার।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের গত ২১ নভেম্বরের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, খেজুরে বিদ্যমান কাস্টমস ডিউটি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর ১০ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। ৫ শতাংশ আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
খেজুর আমদানিনির্ভর ফল ও সব শ্রেণির মানুষের ইফতারে ‘অপরিহার্য উপাদান’ হিসেবে মন্তব্য করে এনবিআর জানায়, শুল্ক-কর হ্রাস করার ফলে মানভেদে কেজিপ্রতি আমদানি ব্যয় কমবে ৬০ থেকে ১০০ টাকা।
ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে, বাংলাদেশে খেজুরের বার্ষিক চাহিদা প্রায় এক লাখ টন। এর মাঝে রোজার এক মাসে চাহিদা থাকে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টন। এর পুরোটাই মেটে আমদানির মাধ্যমে।
সৌদি আরব, আরব আমিরাত, তিউনিসিয়া, মিশর, জর্ডান, ইরাক, ইরান ও পাকিস্তান থেকেই বেশির ভাগ আমদানি হয়।
টিসিবির তথ্য বলছে, শুক্রবার প্রতিকেজি সাধারণ মানের খেজুর বিক্রি হয় সর্বনিম্ন ২৫০ টাকায়, সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায়।
তবে মহাখালী কাঁচাবাজারের সামনে ফলের দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৬০০ টাকায়।
এর বাইরে খোরমা, আজওয়া, মরিয়মের মত খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১৬০০ টাকা কেজি দরে।
এ বাজারের বিক্রেতা নাজমুল হোসেন বলেন, “অন্য আমদানি করা ফলে ভ্যাট বাড়ানোয় এই সুযোগে খেজুরের দাম বেড়ে গেছে। রোজা আসতে আসতে আরও বাড়তে পারে।”
ছোলা-ডাবলির দাম অপরিবর্তিত, বেড়েছে পেঁয়াজ-রসুন
এদিকে রোজার দুই পণ্য ছোলা ও ডাবলির দাম বাজারে অপরিবর্তিত থাকলেও বেড়েছে পেঁয়াজ ও রসুনের দাম।
মহাখালী কাঁচা বাজারের ‘লুৎফর জেনারেল স্টোরের’ বিক্রেতা হাসিব বলেন, “ছোলা ও ডাবলির দাম বেশ কিছুদিন ধরে বাড়েনি। এগুলোর দাম স্থিতিশীল রয়েছে।”
একই কথা বলেছেন বাজারের অন্য বিক্রেতারাও। বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি ছোলা ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ডাবলি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।
বাজারে ভারতীয় মশুর ডাল (মোটা দানা) ১১০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এদিকে খুচরা বাজারে পেঁয়াজ ও রসুনের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় মিলেছে।
ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে, যা গেল সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে।
দেশি রসুনের দাম ২০ টাকা বেড়ে মানভেদে ২২০ থেকে ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।