গোটা বিশ্বে বিপন্ন প্রজাতি প্রাণী সংরক্ষণের চেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ টুল হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে আইভিএফ পদ্ধতি।
Published : 07 Feb 2025, 02:11 PM
বিশ্বে এই প্রথম ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বা আইভিএফ-এর মাধ্যমে ক্যাঙ্গারুর ভ্রূণ তৈরি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, অন্যান্য প্রজাতিকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে সহায়তা করবে এমন অগ্রগতি।
প্রাকৃতিকভাবে গর্ভধারণ যেখানে সম্ভব হয় না, সেখানে আইভিএফ বিকল্প হিসাবে বিবেচিত। এ পদ্ধতিতে জন্মানো শিশুরা সহজ ভাষায় ‘টেস্ট টিউব বেবি’ নামে পরিচিত।
পূর্বাঞ্চলীয় ধূসর প্রকৃতির ক্যাঙ্গারুর নমুনা ব্যবহার করে সফলভাবে এর ডিম্বাণুতে একটি শুক্রাণু কোষ প্রবেশ করান গবেষকরা। তারা বলেছেন, এই ভ্রূণকে জীবিত জন্ম দেওয়ার জন্য আরও গবেষণা ও ‘প্রযুক্তিগত অগ্রগতি’র প্রয়োজন।
এ গবেষণার প্রধান গবেষক আন্দ্রেস গ্যাম্বিনি বলেছেন, এ অগ্রগতি মারসুপিয়াল বা থলিওয়ালা প্রজাতির প্রাণীদের প্রজনন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দিয়েছে। পাশাপাশি কোয়ালা, তাসমানিয়ান ডেভিল, উত্তরের লোমশ ও নাকওয়ালা প্রজাতির প্রাণীর গর্ভাশয় এবং লিডবিটারস পোসামের মতো বিপন্ন প্রজাতির জিনগত বৈচিত্র্য উন্নত করার লক্ষ্যে সহায়তা করতে পারে এটি।
অস্ট্রেলিয়ায় মারসুপিয়াল স্তন্যপায়ী প্রাণীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হলেও স্তন্যপায়ী প্রাণীর বিলুপ্তির হারও এখানেই সবচেয়ে বেশি বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
‘ইন্ট্রাসাইটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইনজেকশন’ বা আইসিএসআই নামে পরিচিত এক পরীক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার করে এই ভ্রূণ তৈরি করেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ কুইন্সল্যান্ড’-এর বিজ্ঞানীরা। গ্যাম্বিনি এখানে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হিসাবে কাজ করছেন। এর আগে পরীক্ষাগারে ক্যাঙ্গারুর ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর বেড়ে ওঠার দিকে নজর দিয়েছেন তারা।
এই কৌশলটি এরইমধ্যে মানুষ ও কিছু গৃহপালিত প্রাণীর ওপর ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে এর আগে পূর্বাঞ্চলীয় ধূসর প্রকৃতির ক্যাঙ্গারুর ওপর এ পরীক্ষা চালানো হলেও সেটি মারা গিয়েছিল। বিজ্ঞানীদের এ প্রজাতিটি নির্বাচন করার পেছনের কারণ হচ্ছে, এটি বিপন্ন প্রাণী নয় ও এর সংখ্যাও বেশি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, অস্ট্রেলিয়ায় মারসুপিয়াল প্রজাতির প্রাণীরা কতটা আইকনিক ও জীববৈচিত্র্যে এদের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা জানার পরও এদের টিস্যু নিয়ে গবেষণা এখনও সীমিত পর্যায়ে রয়েছে।
“আমরা এখন মারসুপিয়াল প্রাণীর ডিম্বাণু ও শুক্রাণু সংগ্রহ ও সংরক্ষণের বিভিন্ন কৌশল পরিমার্জন করছি। এ ধরনের পদ্ধতি এই অনন্য ও গুরুত্বপূর্ণ প্রাণীর জিনগত উপাদান রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে,” বলেছেন ড. গ্যাম্বিনি।
গোটা বিশ্বে বিপন্ন প্রজাতি প্রাণী সংরক্ষণের চেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ টুল হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে আইভিএফ পদ্ধতি।
গত বছর বিশ্বের প্রথম আইভিএফ পদ্ধতিতে গন্ডারের গর্ভাবস্থা তৈরি করতে পেরেছিলেন বিজ্ঞানীরা। কেনিয়ার একটি ল্যাবে তৈরি এই গন্ডারের ভ্রূণকে সফলভাবে এক সারোগেট মায়ের পেটে স্থানান্তর করেছিলেন তারা।
২০১৮ সালে বিশ্বে প্রথমবারের মতো গাধার ভ্রূণ তৈরি করতেও ব্যবহৃত হয়েছে আইভিএফ পদ্ধতি।