গবেষকরা বলছেন, পাঁচ হাজার বছর পর মিশরে দাগওয়ালা এক হায়েনার খোঁজ মেলার বিষয়টি বন্যপ্রাণী গবেষণায় এক রোমাঞ্চকর ও অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত।
Published : 05 Feb 2025, 04:53 PM
পাঁচ হাজার বছরের মধ্যে এই প্রথম মিশরের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এক দাগওয়ালা হায়েনার খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘ম্যামালিয়া’তে প্রকাশিত এই বিস্ময়কর আবিষ্কারটি রীতিমতো অবাক করে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের।
সুদান সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে এই একাকী ‘ক্রোকুটা ক্রোকুটা’ নামের হায়েনাটির সন্ধান মেলে। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে, গবাদি পশুকে আক্রমণ করার কারণে হায়েনাটিকে হত্যা করে স্থানীয় লোকজন।
এ আবিষ্কারটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দাগওয়ালা হায়েনা সাধারণত আরও দক্ষিণে অর্থাৎ আফ্রিকার সাব-সাহারান অঞ্চলে পাওয়া যায় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
“আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি,” বলেছেন এ গবেষণার প্রধান লেখক ও মিশরের ‘আল-আজহার ইউনিভার্সিটি’র ড. আবদুল্লাহ নাগি।
“হায়েনার বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও দেখার আগ পর্যন্ত আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল একেবারে অবিশ্বাস্য। তবে প্রমাণ দেখার পর আমি পুরোপুরি হতবাক হয়েছি।”
সুদানের যে স্থানে হায়েনাটি পাওয়া গেছে সেটি এর পরিচিত পরিসর থেকে পাঁচশ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পরিবেশের পরিবর্তন হয়তো হায়েনার অভিগমণের জন্য নতুন এক পথ তৈরি করে দিয়েছে।
কীভাবে এই দাগওয়ালা হায়েনা মিশর পৌঁছাল তা খতিয়ে দেখতে ১৯৮৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাওয়া স্যাটেলাইটের তথ্য বিশ্লেষণ করে গাছপালা ও বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন ট্র্যাক করেছে গবেষণা দলটি।
এসব তথ্যে দেখা গেছে, গত দুই দশকের চেয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওই অঞ্চলের বৃষ্টিপাত ও উদ্ভিদের পরিমাণ বেড়েছে। এটি শিকারী প্রাণীদের জন্য পরিস্থিতির উন্নতি ঘটিয়েছে। ফলে এ অঞ্চলে টিকে থাকা সহজ হয়ে উঠেছে হায়েনাদের জন্য।
নাগি বলেছেন, “এখন আর রুক্ষ নেই এ এলাকাটি। এ অঞ্চলের হাইওয়ে ধরে যাতায়াতের বিষয়টি আগের চেয়ে সহজ হয়েছে। যার থেকে অনুমান করা সম্ভব হায়েনা কীভাবে এত উত্তরে এসে পৌঁছাল। তবে হায়েনাটি কেন এত লম্বা পথ পাড়ি দিল তা এখনও রহস্যই রয়ে গেছে।”
গবেষকরা বলছেন, মূলত শিকারী প্রকৃতির হয় দাগওয়ালা হায়েনারা শক্তিশালী পাল। তবে এরা একা দীর্ঘ দূরত্ব ভ্রমণ করতেও পারে। একদিনে ২৭ কিলোমিটার পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারে এরা। বেশিরভাগ সময় খাবাবের জন্য আধা-যাযাবর প্রকৃতির গবাদি পশুর চলাচলকে অনুসরণ করে এরা।
এ ক্ষেত্রে মিশরের ‘ইলবা’ সুরক্ষিত এলাকার অংশ ‘ওয়াদি ইয়াহমিব’-এ দুটি ছাগলকে আক্রমণ করে হায়েনাটি। এরপর ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্থানীয় লোকজন হায়েনাটিকে অনুসরণ করে খুঁজে বের করে এবং ধাওয়া করে একে হত্যা করে। এ ঘটনাটির ছবি তুলে এর ভৌগোলিক স্থান নির্ধারণ করেন গবেষকরা। এভাবে হায়েনা খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তারা।
বিজ্ঞানীরা দাগওয়ালা হায়েনার প্রাকৃতিক পরিসর সম্পর্কে যা জানতেন সে বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করেছে এ আবিষ্কার। জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে প্রাণীদের অভিগমণের ওপর প্রভাব ফেলে সে সম্পর্কে মূল্যবান তথ্যও দিয়েছে এটি।
হায়েনা কেন এত উত্তরে গেলো তা গবেষণা করতে আগ্রহী বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি তারা খতিয়ে দেখবেন পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে আরও বড় শিকারী প্রাণী নিজের গণ্ডির বাইরে চলে যেতে পারে কি না।
গবেষকরা বলছেন, পাঁচ হাজার বছর পর মিশরে দাগওয়ালা এক হায়েনার খোঁজ মেলার বিষয়টি বন্যপ্রাণী গবেষণায় এক রোমাঞ্চকর ও অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত।