অর্থনীতির নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে এ সরকারকে দশে কত দেওয়া যাবে– এমন প্রশ্নে জাহিদ হোসেন বলেন, “১০ এ ৫। তাও আমি উদার হয়ে বলছি। পজিটিভ হয়ে বলছি। ৫ এর বেশি ওঠা কষ্টকর।”
Published : 08 Feb 2025, 01:49 AM
রাষ্ট্র দর্শন ও রাজনীতির গতিপথে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্টের আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের ব্যবধান আকাশ-পাতাল। কিন্তু গরিব মানুষের প্রধান মাথাব্যথা যে সংসার চালানোর দায়, সেখানে কোনো তফাত দেখছেন না মধ্যবয়সী আফতাবুর রহমান।
ঢাকার তেজগাঁওয়ের একটি কলেজের কর্মচারী আফতাব যে বেতন পান, তাতে প্রতিটা পয়সা হিসাব করে তার মাস চলতে হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ছয় মাসে বাংলাদেশের কী পরিবর্তন দেখছেন জানতে চাইলে শুরুতেই তিনি বললেন বাজার দরের কথা।
“গতকাল সাত দোকান খুঁজে এক লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেল কিনেছি। দাম নিয়েছে ১৯০ টাকা। সরকার পাল্টাইছে, বাজারে কিছু পাল্টায় নাই।”
সরকার গত ডিসেম্বরে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করেছে ১৭৫ টাকা। কিন্তু দোকানিরা ‘সঙ্কটের’ কথা বলে দাম বেশি রাখছে বলে জানালেন আফতাব।
নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বললেন, “নির্দিষ্ট দামের কথা বললে দোকানদার বলে, ‘সরকার থেকে গিয়ে কেনেন’।”
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতার বিপরীতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে উত্তাপের মধ্যে ছয় মাস পূর্ণ করল নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এ সরকারের প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল রাষ্ট্র সংস্কার। সেই সংস্কারের উদ্যোগ এখনও কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। সরকারের তরফে এখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা এবং রোডম্যাপ তৈরির কথা বলা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি ঠিক না হওয়ায় জনমনে স্বস্তি না ফেরার কথা বলছেন বিশ্লেষক আর নাগরিকরা; এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে নানা অপরাধের বিচারের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার।
অর্থনীতিকে ‘সঠিক পথে’ ফেরানোর আশ্বাস দিয়ে সরকার নানান উদ্যোগের কথা বললেও সামষ্টিক অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচক আশাদায়ক কোনো ফল দেখাচ্ছে না বলেই বিশ্লেষকদের অভিমত; এর মধ্যে নিত্যপণ্যের বাড়তি দামে কষ্টের কথাই বলছেন নিম্ন আর মধ্যবিত্তরা।
যে প্রেক্ষাপট ও জনসমর্থন নিয়ে ৮ অগাস্ট অধ্যাপক ইউনূসের সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল, তার বিপরীতে এখনও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না দেখার কথা বলছেন রাজনীতির ধারাভাষ্যকাররা।
দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার যে সময়, অন্তর্বর্তী সরকার সেটা অনেক আগেই ‘পেরিয়ে এসেছে’ মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলেন, “গণঅভ্যুত্থান থেকে জনগণের আকাঙ্খা এবং যে জন অঙ্গীকার ছিল সেগুলোর বেশিরভাগই এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি। সংস্কার এখন পর্যন্ত শুরুই হয়নি।”
তিনি বলেন, “এ সরকারের সবচেয়ে বড় যে খামতিগুলো, সেটার একটা হল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এখনো উন্নয়ন ঘটেনি। সরকার এখন পর্যন্ত মবের উপর নির্ভর করছে।”
বুধবার ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার কর্মসূচির উদাহরণ টেনে অধ্যাপক নাসরীন বলেন, “ফেইসবুকে নানা রকম হুমকি দেওয়ার পরেও সরকার নিরাপত্তায় কোনো ভূমিকা রাখতে পেরেছে এমনটা বলা যাবে না। একটা হল জনগণের নিরাপত্তা, আরেকটা হল রাষ্ট্রীয় সম্পদের নিরাপত্তা- দুটো ক্ষেত্রেই খামতি আছে।”
শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সরকার পতনের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ৫ অগাস্ট ভারতে চলে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
তার ১৫ বছরের শাসনাবসানের তিন দিন পর প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র নেতারাও স্থান পেয়েছেন এই সরকারে।
পালাবদলের ওই সময়ে আন্দোলন দমনে ‘নির্বিচারে হত্যার’ অভিযোগে ব্যাপক জনরোষের মুখে পড়ে পুলিশ; থানায় থানায় আক্রমণ আর অস্ত্রলুটের মধ্যে পুলিশ মাঠই ছেড়ে গিয়েছিল।
অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পর শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ‘কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসন’ চালানোর অভিযোগ এনে ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেন। সংস্কার কার্যক্রম চালানোর পর নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলে আসছেন তিনি।
তবে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো চাইছে, নির্বাচন হোক দ্রুত; আর সংস্কারের মূল কাজগুলো পরবর্তী নির্বাচিত সরকারই করুক।
সংস্কার উদ্যোগের অংশ হিসাবে গত অক্টোবরের শুরুতে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়ে যে ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছিল, তাদের প্রতিবেদন হাতে পেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
ওই ছয় কমিশনের প্রতিবেদনের আলোকে সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠন করেছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের নেতৃত্বে এই কমিশনে সদস্য হিসাবে রয়েছেন ছয় সংস্কার কমিশনের প্রধানরা।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, সংস্কার কমিশনগুলোর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হবে। একই সঙ্গে ওই দিন সংস্কার কমিশনের প্রধানেরা আশু করণীয় কী আছে, মধ্য মেয়াদি কী আছে বা ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকার কী করতে পারে সেটার সর্বসম্মত সুপারিশমালা পেশ করবেন।
ছয় কমিশনের মধ্যে সর্বশেষ দুই কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের আলোচনায় ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে ‘জুলাই সনদ’ হবে, তার বাস্তবায়নের উপর নির্ভর করবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন মধ্য ফেব্রুয়ারিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে পারে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ওই আলোচনার প্রেক্ষিতে সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করার কথা বলা হচ্ছে।
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনগুলোতে ‘বিক্ষিপ্ততা’ থাকার কথা তুলে ধরে অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলেন, “একে অপরের সঙ্গে কানেক্টেড না, বৈপরিত্য আছে। বিশেষ করে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বহুত্ববাদের বিষয়টি উপস্থাপিত হলেও, সরকার স্পষ্টতই একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় গোষ্ঠীর কাছে নতি স্বীকার করছে।”
সংস্কার বনাম নির্বাচন
সরকারের সংস্কারের এজেন্ডার মধ্যে নিজেদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো।
হাসিনার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ‘সরকারের সহায়তায়’ রাজনৈতিক দল গঠন চেষ্টার অভিযোগ করে আসছেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দেওয়ার কথা বললেও জাতীয় নির্বাচনের উপর জোর দিচ্ছে তারা। এর বিপরীতে ‘প্রয়োজনীয়’ সংস্কার শেষে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলছে অন্তর্বর্তী সরকার।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস চলতি বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাব্য সময়সীমার কথা বলেছিলেন গত ডিসেম্বরে।
আর বুধবার জাপানের সরকারি টেলিভিশন এনএইচকে ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন সবচেয়ে দ্রুতও যদি নির্বাচনের আয়োজন করা হয়, ‘এ বছরের শেষ দিকে’ সেটা হতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সংস্কারের পক্ষে অবস্থান প্রকাশ করলেও দ্রুত নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে বিএনপি।
নির্বাচন, সংস্কার ও শিক্ষার্থীদের নতুন দল গঠন নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সম্প্রতি বাহাস হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারে ছাত্র প্রতিনিধি, উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের।
অন্তর্বর্তী সরকারে থেকে রাজনৈতিক দল গঠনে সম্পৃক্ত থাকলে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব। এই সরকার নিরপেক্ষ না থাকতে পারলে নির্বাচনের সময় ‘নিরপেক্ষ সরকার’ প্রয়োজন হবে বলে তিনি মত দিয়েছেন।
এর পাল্টায় উপদেষ্টা নাহিদ বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারে ছাত্র নেতারা যদি রাজনৈতিক দলে যোগ দেন, তবে সরকার থেকে বের হয়েই দেবেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং অভ্যুত্থানের পর গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটি ইতোমধ্যে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। নাম চূড়ান্ত করতে জনমত নেওয়ার কথা বলেছেন সংগঠন দুটির নেতারা।
নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ বিরোধী ছোটো রাজনৈতিক দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টা করছে বিএনপি ও জামায়াত। ভোটের রাজনীতি হিসাবনিকাশে দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াতের বিরুদ্ধে এখন সরব বিএনপির নেতারা।
সংস্কারের আগে বিএনপি নির্বাচনের জন্য ‘অস্থির’ হয়ে গেছে, কারো কারো এমন মন্তব্যের বিষয়ে সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা সংস্কারের কথা আগেই বলেছি, আবারও বলছি যে, আমরা সংস্কার চাই।
“কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা একটা ভুল বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, আমরা সংস্কারের আগে নির্বাচন চাই। নির্বাচনের জন্য অস্থির হয়ে গেছি। বিষয়টা কিন্তু সেটা না।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে কাজ এবং সংস্কারের জন্য সময় দিচ্ছে।
“আরও কিছুটা সময় গেলে রাজনৈতিক দলগুলোর চাহিদা যদি ঠিকমতো পূরণ না হয়, তখন দলগুলো ভিন্নরকমের স্ট্যান্ড নিতে পারে।”
আওয়ামী লীগের বাইরের রাজনৈতিক দলগুলোর বর্তমান কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, “বাকি রাজনৈতিক দলগুলো মাঠে খুব সক্রিয়ভাবে নেই, তাদের কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে না, খুব কম সক্রিয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও সক্রিয় হতে হবে, সামনে নির্বাচন আছে। যদিও তারা নানান ধরনের কার্যক্রম করছে।
“কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে যে কার্যক্রম, সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ এগুলো কম দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে দলগুলো সরকারকেই সহযোগিতা করার মুডে আছে। যদিও কিছু কিছু সমাবেশ করছে।”
‘আওয়ামী লীগহীন’ রাজনীতির মাঠে নতুন মেরুকরণ
প্রবল গণ আন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশই এখনও আত্মগোপনে।
এরইমধ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন পীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুবনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
গত ৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে সারাদেশে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অর্ধশতাধিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে জমা পড়েছে।
এর মধ্যে দুটি মামলায় শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ অনেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল।
বিচারের মুখোমুখি করার জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারত সরকারকে কূটনৈতিকপত্র (নোট ভারবাল) পাঠায় বাংলাদেশ সরকার। ভারত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব বাংলাদেশকে দেয়নি।
ক্ষমতার বাইরে যাওয়ার পর থেকে অনেক হত্যার মামলা আর ব্যাপক ধরপাকড়ের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে সন্ত্রাসী বিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে দলের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগের।
গত ছয় মাসে আওয়ামী লীগ কিছু কর্মসূচি দিলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও বিএনপি-জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানের কারণে সেভাবে মাঠে দাঁড়াতে পারেনি।
ফেইসবুকে ঘোষণা দিয়ে ফেব্রুয়ারিতে নানা কর্মসূচি রেখেছে আওয়ামী লীগ; কর্মসূচির শেষ পর্যায়ে ১৮ তারিখ সারাদেশে হরতালের কথাও রয়েছে।
এর মধ্যে সরকার পতনের ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার দিন বুধবার রাতে ছাত্রসমাজের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার ঘোষণা আসে।
বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে, যাদের নেতৃত্বে গত বছরের জুলাই-অগাস্টের গণ অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছিল।
এরপর ধানমণ্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির উদ্দেশ্যে ‘বুলডোজার মিছিলের’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। শেখ হাসিনার ভাষণ চলার মধ্যে সেখানে জড়ো কয়েক হাজার মানুষ।
এক্সক্যাভেটর ও ক্রেন এনে ওই রাতেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বাংলাদেশের জন্ম সংগ্রামের অনেক ইতিহাসের সাক্ষী ওই বাড়ি, যেখানে ৫ অগাস্ট সরকার পতনের দিন আগুন দেওয়া হয়েছিল।
কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতির এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে এলেও কিছু সময় পর সরে যায় সেনাবাহিনীর একটি দল; পুলিশের কোনো ভূমিকা দেখা না গেলেও ডিএমপি কমিশন সাজ্জাত আলী বলেছেন, তারা সেখানে ‘সতর্ক অবস্থায়’ ছিলেন।
ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধাসদনের পাশাপাশি সারাদেশে তার আত্মীয়দের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
শেখ হাসিনার ‘উসকানিমূক বক্তব্যকে’ এই ধ্বংসযজ্ঞের জন্য দায়ী করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি যেন এভাবে ভারতের বসে ‘মিথ্যাচার’ করতে না পারেন, সেজন্য ঢাকায় ভারতীয় মিশনের প্রধানকে ডেকে প্রতিবাদপত্র ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ঐতিহাসিক ওই বাড়ি ভাঙাকে দুঃখজনক হিসাবে বর্ণনা করে বিবৃতি দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
শেখ হাসিনার পরিবারের সম্পত্তি ধ্বংস এবং আওয়ামী লীগের লোকজনের ওপর হামলা থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা না হলেও দলটি যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, সে বিষয়ে সোচ্চার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের শিক্ষক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, “কেউ যদি বলে আওয়ামী লীগ নাই, এটা ঠিক হবে না। দলটি কার্যকরভাবে কর্মসূচিতে নেই। কিন্তু কর্মসূচিও দিচ্ছে কিছু কিছু জায়গায়।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগকে তো নিষিদ্ধ করা হয়নি। তাদের রাজনীতির সুযোগের কথা সরকার ও বিএনপিসহ অন্যরাও বলছে। তবে এর সঙ্গে বিচারের বিষয় আছে। এসব মোকাবেলা করে তারা কীভাবে ফিরতে পারবে, সেটা দেখার বিষয়।”
রাজনীতির মাঠের এ পরিস্থিতির মধ্যে ধর্মভিত্তিক দলগুলো দারুণ সক্রিয়। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে দমন-পীড়নের শিকার জামায়াতে ইসলামী তৃণমূল্য পর্যায়েও দল গোছাতে ব্যস্ত। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও দেশের রাজনীতিতে নতুন শক্তি হয়ে উঠতে চাইছে।
এ অবস্থায় ইসলামী দলগুলো কে কার সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচনে যাবে, সেই গুঞ্জন চলছে। জামায়াত এবং বিএনপি দুই পক্ষই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে নিজেদের পক্ষে টানতে চাইছে। আর চরমোনাই পীরের দলটি দুই পক্ষকেই আপাতত আশ্বস্ত করেছে।
গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকা দলগুলো কার্যত নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। বাম ধারার দলগুলো কিছুটা সক্রিয় থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তারা সফল হতে পারেনি।
এর মধ্যে ৮ জানুয়ারি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর তাতে দুটি প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসতে থাকে রাজনীতির আলোচনায়।
আওয়ামী লীগের শাসন অবসানের পর থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীদের অনেকে তাদের লন্ডনপ্রবাসী নেতার ফেরার প্রত্যাশায় দিন গুনছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন, সেই প্রশ্নের উত্তর তারা এখনো পাননি।
আর সেখান থেকেই দ্বিতীয় প্রশ্নের উৎপত্তি। সোশাল মিডিয়ায় বলাবলি হচ্ছিল, দেড় দশক আগের সেই ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলার বাস্তবায়ন কি হয়েই গেল?
দেশের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি নিয়ে অস্বস্তি থাকলেও বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা এখনকার পরিস্থিতিতে ‘ওয়ান-ইলেভেনের’ সেই পরিস্থিতির সঙ্গে মেলাতে চান না। তবে তারেক কবে ফিরবেন, সেই প্রশ্নের কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তরও তারা দিতে পারেননি।
অর্থনীতির হালচাল
আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়েই অর্থনীতির দুর্দশার চিত্র মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। এরমধ্যে অভ্যুত্থানের অস্থিরতা এবং ক্ষমতার পালাবদলে সৃষ্ট আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যে এক ধরনের ‘স্থবিরতা’ তৈরি হয়।
২০২৪ সালের পুরোটা সময়জুড়ে দুই অংকে থাকা মূল্যস্ফীতি জানুয়ারিতে এক অংকে নামলেও খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখোনো ১০ শতাংশের ওপরে। এর মধ্যে ভ্যাট ও শুল্ক বাড়িয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার।
অন্তর্বর্তী সরকার ছয় মাসে অর্থনীতি সামাল দিতে কতটা সফল হল এমন প্রশ্নে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “সাফল্যের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক লেনদেন ভারসাম্যে যে ঘাটতি আগে ছিল, সেখানে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যাচ্ছে। এছাড়া অর্থনীতিতে সাফল্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”
এ সাফল্যের মূল্যে রয়েছে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ও রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন।
জাহিদ হোসেনের ভাষ্য, “এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যখন শ্রমিক অসন্তোষ চলছে, কারখানা বন্ধ হচ্ছে, অবরোধ চলছে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি আছে, তারপরও এক্সপোর্টের ১২-১৩ শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। এটা উল্লেখযোগ্য সাফল্য। কারণ এর মধ্যে শ্রমিকদের বুঝিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে; উৎপাদন বাড়াতে হচ্ছে।
“রেমিট্যান্সেও বড় উল্লম্ফন হয়েছে। জানুয়ারিতে একটু দুর্বল হয়েছে। কিন্তু এটা এর আগের কয়েক মাসের তুলনায় ভালো। জানুয়ারি মাসে ২ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আগে গড়ে এটা ছিল ১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। এখানে একটা উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যাচ্ছে।”
এছাড়া অর্থনীতিতে ‘সাফল্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না’ মন্তব্য করে এক্ষেত্রে দুটি বিষয় চিহ্নিত করেন এ অর্থনীতিবিদ।
তিনি বলেন, “সবচেয়ে বড় সমস্যা মূল্যস্ফীতি ও বিনিয়োগ। এখানে সাফল্য মিলছে না। আমদানিতে কিছু প্রবৃদ্ধি হয়েছে তবে সেটি ভোগ্য পণ্য ও কাঁচামালের আমদানিতে। পোশাক খাতে রপ্তানির জন্য উৎপাদন লাগে তাই হয়েছে।
“তবে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি এখনও ঋণাত্মক। এর অর্থ হচ্ছে, মানুষ টাকা খাটাতে ভরসা পাচ্ছে না।”
অবশ্য সরকারের নীতি গ্রহণে কথা ও কাজের মধ্যে ‘সঙ্গতি’ খুঁজে পাচ্ছেন অর্থনীতির এ বিশ্লেষক।
তার ভাষ্য, “পলিসির ক্ষেত্রে কিছু সঙ্গতি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে যা আগে একদমই ছিল না। অর্থ্যাৎ কথা এবং কাজের মিল। মূলত দুটি ক্ষেত্রে বলতে হয়।
“এক মুদ্রানীতি। দুই এডিপি বাস্তবায়ন। তারা বলছে ‘আমরা এডিপি বাস্তবায়নে খরুচে হব না। সপ্তাহে সপ্তাহে প্রকল্প ওঠাব না।’ তাইই করছে।”
তবে সাধারণ মানুষকে যা সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয়, সেখানে সরকারের যে সাফল্য নেই, সে কথাও বলেন জাহিদ হোসেন।
“মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান, মজুরি যা সাধারণ মানুষকে বেশি এফেক্ট করে সেখানে দৃশ্যত সাফল্য নাই।”
অর্থনীতির নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে এ সরকারকে দশে কত দেওয়া যাবে– এমন প্রশ্নে জাহিদ হোসেন বলেন, “১০ এ ৫। তাও আমি উদার হয়ে বলছি। পজিটিভ হয়ে বলছি। ৫ এর বেশি ওঠা কষ্টকর।”
অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এখনও জনমনে স্বস্তি না ফেরার কথা তুলে ধরে বিশ্লেষক অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলেন, “কিছুটা হয়ত শাকসবজির দাম কমেছে, পাশাপাশি দেখেছি চাকরিতে অনিশ্চয়তা এবং জব কাট হচ্ছে।
“বাইরের অনেক সাহায্য বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকগুলো নবায়ন হয়নি। দেখেছি, টাকা খুঁজছে সরকার। এবং সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। সেগুলো ইঙ্গিত করে, অর্থনৈতিক দিক দিয়েও সরকার নাজুক অবস্থায় আছে।”
আইনশৃঙ্খলায় উন্নতি আছে, স্বাভাবিকতা ফেরেনি
আওয়ামী লীগের সরকার পতন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মাঝে তিন দিন দেশে কার্যত কোনো সরকার ছিল না। জনরোষ আর আক্রমণের মুখে থানা থেকে পালিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। ডাকাত ঠেকাতে পাড়ায় মহল্লায় রাত জেগে পাহারা দিয়েছে মানুষ।
সেই অবস্থা থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও স্বাভাবিকতা ফেরেনি গত ছয় মাসে।
পুলিশি ব্যবস্থায় সংস্কারের আলাপের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাকে পরিবর্তন আনছে সরকার। এজন্য গঠিত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা পড়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে।
প্রকাশ্যে ছিনতাই ও হত্যার খবর আসছে অনেক। পুলিশের নির্লিপ্ততার অভিযোগের মধ্যে উত্তেজিত জনতাকে (মব) অনেক ক্ষেত্রে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে দেখা যাচ্ছে। ছাত্র-জনতার সমর্থক নিয়ে ক্ষমতায় বসা সরকার সেসব ঠেকাতে পারছে না।
নানা দাবিতে আন্দোলনে হরহামেশায় রাস্তা বন্ধ করা হচ্ছে; অনেকক্ষেত্রে সরকার ও পুলিশের উদ্যোগহীনতায় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাবেক সামরিক কর্মকর্তাদের যুক্ত করার কথা জানিয়েছে সরকার।
শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জেল থেকে বেরিয়ে গেছে, চাঁদাবাজি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তাদের এলাকা ভাগ করে নেওয়ার খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে। বিপরীতে তাদেরকে নজরদারির মধ্যে রাখার কথা বলছে পুলিশ।
পুলিশ কাজে ফিরলেও তাদের মনোবল ফিরতে আরও অনেক সময় লাগার কথা বলছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটাতো বিরাট একটা পরিবর্তন হয়েছে, যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাত্রারিক্ত বলপ্রয়োগ ছিল এবং প্রায় অনেক ক্ষেত্রে গণশত্রুতে পরিণত হয়েছিল। এখন সেই অবস্থা থেকে বদলে আসা… একটু তো সময় লাগবেই। মনোবল ফেরাতে সময় লাগবে একটা।”
সাবেক এই আইজিপি বলেন, “দেশে অনেকের মধ্যে আইন অমান্য করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে খুব বড়ভাবে, বেশ কিছু জায়গায় আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া, নিজেদের মতামত চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এই রকম একটা অবস্থায় যখন ফ্লুইড অবস্থান থাকে, যখন কোনো কঠিন নির্দেশনা আসতে পারে না, তখনতো একটু অসুবিধা হয়।
“এবং সরকারেরও একটা পলিসি হচ্ছে, ন্যূনতম শক্তি প্রয়োগ করে, বা শক্তি প্রয়োগ না করে সমাধান করা। রাতারাতি লোকতো বদলে যায়নি, এই রকম পরিস্থিতিতে কষ্ট হচ্ছে, সময় লাগবে।”
নুরুল হুদা বলেন, “পুলিশের সরঞ্জামাদির ক্ষতি হয়েছে, লোকবলের ক্ষতি হয়েছে। তারপর, অনেকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা আছে। অতএব কর্মপরিবেশটা ফিরিয়ে আনতে আরও কিছু সময় লাগবে। তবে কাজ হচ্ছে, সময় লাগবে।”
বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন বলেন, “কেন এত আন্দোলন হচ্ছে? কারণ আপনি যখন নির্দিষ্ট একটা গোষ্ঠীর দাবিদাওয়া এক ঘণ্টার মধ্যে মেনে নিচ্ছেন তখন অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছে। একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দাবি-দাওয়াই মানছে সরকার। অন্যদেরটা মেনে নিচ্ছে না। কেন মানছে না, আলাপের জায়গাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। আলাপ কিন্তু নেই।”
সরকার অনেকক্ষেত্রে মবকে ‘উৎসাহিত করছে’ বলেও অভিযোগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের এই শিক্ষক।
তিনি বলেন, “স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তিতুমীর কলেজের আন্দোলনের সময় বলেছেন, তাদেরকে জনগণ তুলে দেবে।
“স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, সরকার কী তাহলে মবোক্রেসিকে উৎসাহিত করছে? মবই কি তাহলে সরকারের বড় অস্ত্র? তার মানে হল, উপদেষ্টা যারা আছেন, তারা দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না, কোনো না কোনো ভাবে তারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন কিংবা তাদের মনোযোগ অন্যদিকে।”
পুলিশ সংস্কার কমিশন যে সুপারিশগুলো দিয়েছে সেখানে ‘মৌলিক কাজ’ দেখতে পাচ্ছেন না সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা।
তিনি বলেন, “যা দেখেছি, উনারা অনেক মৌলিক কাজ ধরেন নাই। আমি বলছি যে, এই পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে কোনো নতুনত্ব নেই। নতুন এমন কিছু বলেনি। আর যেগুলো বলেছে, সেগুলো পুলিশ কমিশনের রিপোর্টে না থাকলেও চলে। এগুলো দৈনন্দিন কাজে লাগে।
“যেমন- বলপ্রয়োগ কি হবে, না হবে ওগুলোতো বলা আছে আইনে। যা-ই হোক, সেটা বললে খারাপ কিছু না। এটা এমন খুব প্রয়োজনীয় না।”
এর আগে পুলিশ সংস্কার কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত এই সাবেক পুলিশপ্রধান বলেন, “আমার মতে, যেটা জরুরি দরকার ছিল, ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন যেটা, সেটার কেন বদলাতে হবে এবং কী কী বদলাতে হবে- এই সমস্ত কথা তারা বলে নাই। বলেছে, কিছু কিছু আইন বদলাতে হবে, সুনির্দিষ্ট না করে। সেটা আমার কাছে একটু গা ছাড়া ভাব মনে হয়েছে আর কি।”
আইন সংশোধনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “যে আইনে চলে সেখানে সরকারকে অনেক ক্ষমতা দেওয়া আছে। তো সরকারের ক্ষমতা থাকবে, কিন্তু সরকারকে বলতে হবে যে, কতদূর পর্যন্ত সরকার যাবে এবং সরকার নিয়ম মোতাবেক যাবে।
“১৮৬১ সালের যে আইন, তখনতো কোনো সংবিধান ছিল না। তখন কোনো নির্বাচিত সরকার ছিল না, তখন কোনো স্থানীয় জবাবদিহিতা ছিল না। সেই আইন দিয়ে এখন চলে কি করে? এখন তো খোলনলচে বদলে দেওয়া উচিত। উনারা অন্তত ৮-১০টা সুপারিশ করতে পারতেন।”