শনিবার রাতভর তার লেখা ও সুর করা গান পরিবেশনের মাধ্যমে এবারের উৎসবের ইতি ঘটবে।
Published : 08 Feb 2025, 01:08 AM
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে কালজীয় বাউল শাহ আবদুল করিমের ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ গানের মাধ্যমে শুরু হয়েছে ২০তম শাহ আবদুল করিম লোক উৎসব।
শুক্রবার রাত ৮টায় সুনামগঞ্জের ডিসি মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বাউলের জন্মভিটা উজানধল গ্রামে উৎসবের উদ্বোধন করেন।
হাজারো ভক্ত-অনুসারী কালজয়ী এ বাউলের পাগল করা সুর ও গানে মজতে ও মজাতে ছুটে এসেছেন উৎসবে।
শনিবার রাতভর গানের মাধ্যমে উৎসবের শেষ হবে।
রাত পৌনে ৯টায় উৎসব উদ্বোধনের পর বাউলের ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ কোরাস গান গাইতে মঞ্চে আসেন বাউল শাহ আবদুল করিমের অন্যতম শিষ্য বাউল আব্দুর রহমান, রণেশ ঠাকুর, সিরাজ উদ্দিন, পুত্র শাহ নুর জালাল, সূর্যলাল দাস, প্রাণকৃষ্ণ দাস ও নতুন প্রজন্মের শিল্পী সৌরভ সোহেল, বাউলিয়ানা ফয়সলসহ স্থানীয় প্রায় অর্ধশত শিল্পী।
তারা কোরাস কণ্ঠে গলা ছেড়ে গানটি গাইতে থাকেন।
এরপর শিষ্য বাউল আবদুর রাহমান, রণেশ ঠাকুর, সিরাজ উদ্দিন, সূর্যলাল দাশ বাউল শাহ আবদুল করিমের লেখা ও সুরে একক গান পরিবেশন করেন।
তারা একে একে ‘শোষক তুমি হও হুঁশিয়ার, কথা বল সাবধানে’, ‘বসন্ত বাতাসে সইগো’, ‘মুর্শিদ ধন হে, প্রাণনাথ ছাড়িয়া যাইয়ো না বন্ধুরে’, ‘কেন পীরিতি বাড়াইলা রে বন্ধু’ ইত্যাদি কালজয়ী গান পরিবেশন করেন।
মাঠভরা দর্শক ‘ওয়ান মোর, ওয়ান মোর’ ধ্বনীতে বাউলের শিষ্যদের উৎসাহ দিচ্ছিলেন। এভাবে রাত ১১টা পর্যন্ত বাউলের শিষ্যরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
শাহ আবদুল করিম পরিষদের সভাপতি করিমপুত্র শাহ নুর জালালের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জের ডিসি মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিকাশ কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সমর কুমার পাল, দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জীব সরকার, দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক, তাড়ল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ।
বাউলপুত্র নূর জালাল বলেন, “বাউল শাহ আবদুল করিম লোক উৎসবে গান গাইবেন ফকির শাহাব উদ্দিন, কণ্ঠশিল্পী আশিক, চ্যানেল আই বাংলাগানের তারকা দোয়েল, মুক্তা সরকার, রূমকি সরকার, লাভলী দেব, শারমিন আক্তার, সৌরভ সোহেল, ফকির মাহমুদা। তাছাড়া বাবার শিষ্যরাও দুই দিনের উৎসবের প্রতিদিনই গান গাইবেন।”
একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী শাহ আবদুল করিম সর্বহারা শ্রেণির বাউল ছিলেন।
তিনি পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে গানে গানে প্রতিবাদ করেছেন।
তার লেখা হাজারো কালজয়ী গান সারা বিশ্বে গীত হচ্ছে। তার গান গেয়ে সুনাম অর্জন করেছেন এই প্রজন্মের অনেক শিল্পী।
শাহ আবদুল করিমের শিষ্যরা তাকে মুর্শিদ রূপে ভজনা করতেন।
বাউল শিষ্য আবদুর রাহমান বলেন, “তিনি ছিলেন আমার মুর্শিদ। তিনি সর্বহারা মানুষের পক্ষে গান লিখেছেন। সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে গানে ও সুরে প্রতিবাদ করেছেন। শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ও জনতার পক্ষে ছিলেন তিনি। ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ এদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম গান গেয়েছেন। তার গান মানুষের মধ্যেই আজীবন টিকে থাকবে।”
বাউল রণেশ ঠাকুর বলেন, “শাহ আবদুল করিম ছিলেন আমার গুরুভাই। সারাজীবন তার কাছ থেকে শিখেছি। মানুষই ছিল তার আরাধ্য। মানুষের পক্ষেই গানে গানে উচ্চকণ্ঠী ছিলেন।”
তার গানের বাণী ও সুর অবিকল রেখে নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের গান গাওয়ার আহ্বান জানান রণেশ ঠাকুর।