“আপনারা যারা ভাঙার রাজনীতি চান না, আমি তাদের সঙ্গে একমত। কিন্তু আমার একটা কথা আছে- ভাঙার রাজনীতি একই সঙ্গে গড়ারও রাজনীতি।”
Published : 08 Feb 2025, 12:38 AM
সম্প্রতি ভারত থেকে শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে ‘ভূরাজনীতির সম্পর্ক’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কবি, প্রাবন্ধিক ও চিন্তক ফরহাদ মজহার।
শুক্রবার জাতীয় নাগরিক কমিটির এক সভায় তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা হঠাৎ করে বক্তব্য দেননি। নয়া দিল্লি প্রথম দিন থেকেই বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
“বন্যা থেকে শুরু করে খাদ্য ও অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর কাজটা তারা করেছে। কিন্তু এখনকার যে পদক্ষেপ, সেটা ট্রাম্প আসার পরের। ১২ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প-নরেন্দ্র মোদীর যে বৈঠক, তার আগে এটা ছিল লিটমাস টেস্ট। আপনারা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখান সেটা তারা দেখতে চেয়েছিল।”
ফরহাদ মজহার বলেন, “আপনারা যারা নিন্দা করেছেন, বলেছেন যে ভাঙার রাজনীতি চান না। আমি আপনাদের সঙ্গে একমত। কিন্তু আমার একটা কথা আছে- ভাঙার রাজনীতি একই সঙ্গে গড়ারও রাজনীতি।”
পরাজিত ফ্যাসিবাদের বিপরীতে ভিন্নরূপে নতুন ফ্যাসিবাদ যেন মাথাচাড়া না দেয়, সে বিষয়েও সতর্ক করেন তিনি।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ২৪টি থানার প্রতিনিধিদের নিয়ে এই সভা করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। ফরহাদ মজহার ছিলেন অনুষ্ঠানের অতিথি আলোচক।
নাগরিক কমিটির মাধ্যমে অভ্যুত্থানের নেতাদের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, “সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লবের কারণে যে গণঅভ্যুত্থান সফল করা যায়নি, সেই গণঅভ্যুত্থানকে পূর্ণ করবার জন্য বা পরিপূর্ণ গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণসার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা এবং নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করার রাজনীতি আগামী দিনে করতে হবে।”
নতুন যে রাজনৈতিক দল গঠন করা হবে, সেটাকে বিপ্লবী চেতনা ধারণ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “জনগণ আর দল এক নয়। আপনারা একটা দল করতে নেমেছেন। কিন্তু আমি সন্দেহ করব, আপনারা কি আরেকটা বিএনপি বানাবেন? নাকি সত্যিকারের গণঅভ্যুত্থানটা পূর্ণ করার সাংগঠনিক শক্তি হাজির করবেন।
“যদি আরেকটি নির্বাচনবাদী দল করেন, যদি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার বদলাতে চান, সরকার গঠন করতে চান, সেটা হবে দুঃস্বপ্ন।”
ফরহাদ মজহার বলেন, “অনেকে ফ্যাসিবাদ বিলোপ হয়ে যাওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু ফ্যাসিবাদ শুধু একটা মতাদর্শ নয়; এটা একই সঙ্গে একটা রাষ্ট্রব্যবস্থা, একই সঙ্গে একটা ফ্যাসিস্ট শক্তি। এই তিনটি বিষয় আলাদা করে লড়াই ও রণনীতি প্রণয়ন করতে হবে।
“ফ্যাসিবাদ হচ্ছে মতাদর্শ, যেখানে ব্যক্তি মনে করে যে তার তত্ত্বটা একমাত্র সত্য তত্ত্ব, আর বাকিদেরটা মিথ্যা। আপনি যদি সেক্যুলার হন, তাহলে ইসলামিস্টরা মিথ্যা। আবার ইসলামিস্ট হলে সেক্যুলাররা মিথ্যা; আপনি যদি আদিবাসী হন, তাহলে বাঙালিরা মিথ্যা; আর যদি বাঙালি জাতিবাদী হন তাহলে বিভিন্ন রকম ক্ষুদ্র জাতিসত্তা মিথ্যা।”
ফরহাদ মজহারের ভাষ্য, “আজ বাঙালি জাতীয়তাবাদ হয়ত উৎখাত হতে চলেছে। কিন্তু ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ, সেটা হিন্দুত্ববাদী হোক আর ইসলামপন্থি হোক, সেটাও কিন্তু ফ্যাসিবাদের একটা রূপ।
“রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তন নিশ্চিত করতে এর আগে দুইবার ব্যাহত হওয়া জুলাই ঘোষণা ও সংবিধান বাতিলের উদ্যোগ আবার নিতে হবে।”
অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর ‘ভুল’ ধরিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা চুপ্পুকে (রাষ্ট্রপতি) পদত্যাগে বাধ্য করাতে পারেননি। তাকে পদত্যাগ করতে হবে; ৭২ সালের সংবিধান বাতিল করতে হবে। কারণ ওটা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী।
“মুক্তিযুদ্ধে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম- সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করব। সেই মুক্তিযুদ্ধ ছিনতাই করে নিয়ে গেছে দিল্লি। তার জবাব আমরা এত বছর পর ৫ অগাস্ট দিতে পেরেছি। কিন্তু আমরা সংবিধান বাতিল করতে পারি নাই।”
বিকাল সাড়ে ৩টায় শুরু হওয়া সভা শেষ হয় রাত ৯টার পরে। প্রথমে বিভিন্ন থানা থেকে আসা প্রতিনিধিরা নাগরিক কমিটিতে কাজ করতে গিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দিন পাটওয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, মুখ্য সংগঠন সারজিস আলম শেষ পর্বের আলোচনা ও প্রশ্নোত্তরে অংশগ্রহণ করেন।