“ছয় মাস পর যেকোনো স্থাপনা, জানমাল, বাড়িঘর, ব্যবসা-বাণিজ্যের নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের সাংবিধানিক; প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব”, বলেন সাইফুল হক।
Published : 07 Feb 2025, 05:24 PM
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘আহ্বানে দেশে একটা নৈরাজ্য’ সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু।
শুক্রবার বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের (এমএল) এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আহ্বানে বাংলাদেশে একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
“সরকার যেখানে আছেন, সরকারেরও উচিত হবে আজ এই নৈরাজ্য যারা করছেন; যারা এতে জড়িত, সরকারের উচিত তাদের থামানোর চেষ্টা করা।”
তিনি বলেন, “এদেরকে থামাতে হবে। নইলে আমি মনে করি, এটা দেশের জন্য অশনি সংকেত। এই অশনি সংকেত থেকে দেশ রক্ষার দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের।”
বুলু বলেন, “শেখ হাসিনা অতীতে যে মানুষ হত্যা করেছেন, ২০ হাজারের অধিক; আবার নতুন করে উনি অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন, সেজন্য নতুন করে আরেকটি আদালত গঠন করা উচিত বলে আমি মনে করি।”
শেখ হাসিনার সরকার পতনের ছয় মাস পূর্ণ হয় গত বুধবার। এদিন রাতে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, যিনি ৫ অগাস্ট ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে ভারতের দিল্লিতে আছেন।
এর আগেই বুধবার বিকালে আলোচিত ‘কন্টেন্ট ক্রিয়েটর’ ইলিয়াস হোসাইন ও পিনাকী ভট্টাচার্য ফেইসবুকে ‘ধানমণ্ডি ৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিল’ ঘোষণা করেন।
সেই আহ্বানে বিপুল মানুষ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। হামলা হয় সারা দেশে আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ অনেক নেতার বাড়িতে।
এসব ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বুলু বলেন, “ভারতে বসে শেখ হাসিনা দেশকে অস্থিতিশীল করতে যে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, সেজন্য ভারত সরকারকেও জবাবদিহিত করতে হবে।
“কারণ ভারতে বসে একজন খুনি কীভাবে বাংলাদেশে আরও খুনের বন্যা বইয়ে দেওয়ার জন্য এমন বক্তব্য রাখতে পারেন, এটা আজ একটা প্রশ্ন।”
এদিন জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এমএলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হয়। দ্বিতীয় পর্বে ছিল কর্ম অধিবেশন।
সভায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘‘গত পরশু থেকে দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেই বক্তব্য উসকানিমূলক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ছয় মাস পর হলেও আমরা দেখলাম হাসিনার কণ্ঠে অনুশোচনা নেই।
বিভিন্ন স্থানে ‘হামলা-ভাঙচুরের’ বিষয়ে তিনি বলেন, “ছয় মাস পার হওয়ার পর সরকার কীভাবে এসব ঘটতে দিল? আমরা খুব স্পষ্ট করে মনে করি, জনগণের মধ্যে এই ধারণা তৈরি হয়েছে যে, তবে কি সরকার দেশ চালাতে পারছে না?
“আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নাই; আমাদের এলিট ফোর্স কি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নাই; তাহলে এখানে কি যা-কিছু করা যায়?”
তিনি বলেন, “ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি। মুক্তিযুদ্ধের আগে, মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং পরবর্তী সময়ে এই বাড়ির সঙ্গে আমাদের বাংলাদেশ ও তার ইতিহাসের, আমাদের রাষ্ট্র গঠনের একটা সম্পর্ক আছে।
“সেটা যেভাবে সরকারের নাকের ডগায় এবং যেভাবে প্রায় দুইদিন ধরে সেটাকে গুড়িয়ে দেওয়া হলো, এটা কি সরকারের জন্য ভালো হলো; এটা কি দেশের জন্য ভালো হলো; মানুষ কি এটা গ্রহণ করেছে; আন্তর্জাতিক পরিসরে মানুষ কি এটাকে ভালোভাবে নিয়েছে?”
সাইফুল হক বলেন, ‘‘সারা দেশে হামলা-আক্রমণ-ভাংচুর হয়েছে, দেশে এক ধরনের নৈরাজ্য পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর দায় অবশ্যই অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে।
“ছয় মাস পর যেকোনো স্থাপনা, জানমাল, বাড়িঘর, ব্যবসা-বাণিজ্যের নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের সাংবিধানিক; প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব।”
‘দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দিন’
বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ‘‘আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, ন্যূনতম সংস্কার করে জাতির যদি কোনো মতামত থাকে, আমরা সেটা মেনে নিতে চাই। কিন্তু সংস্কারের নামে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পাঁয়তারা জাতি বরদাশত করবে না।
‘‘মানুষের দাবি হচ্ছে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। আপনারা সেই রাস্তা তৈরি করে দিন। আমরা ১৭ বছর এই রাজপথে থেকে এই দাবির জন্য আন্দোলন করেছি। সেজন্য আমরা আজ বলতে চাই, আর সময়ক্ষেপণ না করে শিগগিরই নির্বাচনের রোডম্যাপ দিন।”
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে এমএল সাধারণ সম্পাদক হারুন চৌধুরী, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক খান মো. নুরে আলম, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের মহাসচিব হারুন আল রশিদ উপস্থিত ছিলেন।