‘তানযানিয়ার হৃদয় হতে’: হীরে নয়, প্রকৃতিই এ দেশের গুপ্তধন

তানজানিয়া দেশটি দুটি ভূখণ্ড জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছিল, ‘ট্যাংগানিকা’ মানে মূল ভূখণ্ড আর ‘জানজিবার’। ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ১২০টিরও বেশি আদিবাসী গোষ্ঠীর আবাসস্থল, হস্তশিল্প, কয়েকটি জাতীয় উদ্যান, পশুপাখির অভয়ারণ্য আর জানজিবারের ভুবন ভোলানো সৈকতের রূপ নিয়ে হয়ে উঠেছে এক অনন্য দেশ।

এ দেশের একদিকে বয়ে যায় ভারত মহাসাগরের জল, আর অন্যদিকে কিলিমানজারোর মতো পর্বত দেয় পাহারা। আদিবাসীদের বর্ণিল জীবনযাপন আর সাধারণ মানুষের সহজাত অতিথিপরায়ণতা নিয়ে যায় আফ্রিকার অজানা এক জগতে।

আফ্রিকা মহাদেশ নামটি শুনলেই অনেকের মনে আসে রঙিন পোশাক আর ভারী গয়না পরা আদিবাসী মানুষ, ভয়ঙ্কর জঙ্গল বা মরুভূমি। কারো মনে আসে রঙিন হস্তশিল্পের বিশাল ভাণ্ডার, কেউ কেউ মনে করেন সেখানে গেলে তাল তাল হীরের সন্ধান পাওয়া যাবে। কেউ বা মনে করেন বিস্তীর্ণ ভূমিতে বিভিন্ন পশুপাখির আবাসস্থল। কেউ আবার মনে করেন বঞ্চিত, শোষিত, অবদমিত ও বিভাজিত এক মানব সমাজ।

আসলে আফ্রিকার প্রকৃতি, জনসাধারণের জীবনযাপন কেমন তা নিরীক্ষা করতেই লেখক ফাতিমা জাহান ভ্রমণ করেছেন আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ। বাইরে থেকে ঝলমলে মনে হলেও সাধারণ মানুষের জীবনযাপন, তাদের বেদনা ও বঞ্চনা লেখক তুলে ধরেছেন ‘তানযানিয়ার হৃদয় থেকে’ শিরোনামে এ বইয়ে।

আফ্রিকা বিখ্যাত নিজস্ব বনভূমিতে পশুপাখির অভয়ারণ্য বানিয়ে সংরক্ষণের জন্য। তানজানিয়ার মতো বৈচিত্র্যময় দেশে তাই লেখকের পদচারণা থেমে থাকেনি সেইসব শ্বাপদসংকুল জঙ্গলেও। সেখানকার আদিবাসী মানুষ বা আধুনিক শহরের মানুষের জীবনযাত্রার ছবি উঠে এসেছে লেখকের কলমে।

তানজানিয়ার গুপ্তধন কোন হীরে বা দামি খনিজের খনিতে লুকিয়ে নেই, লুকিয়ে আছে এর শান্ত, অসামান্য সুন্দর বিভিন্ন দ্বীপপুঞ্জের মাঝে। পান্না সবুজ জল আর জলের অদ্ভুত অজানা জগতে লেখকের হাত ধরে অনেক অজানা দুয়ার খুলে গিয়েছে।

ভৌগোলিক দিক দিয়েও তানজানিয়া আশ্চর্য এক দেশ। এ দেশটির প্রতিবেশী দেশ হল- কেনিয়া, রোয়ান্ডা, উগান্ডা, বুরুন্ডি, কংগো, জাম্বিয়া, মোজাম্বিক ও মালাউই। এতগুলো দেশ পরিবেষ্টিত হয়েও একপাশে নীল সাগরেরও প্রতিবেশী এই দেশ।

তানজানিয়া আফ্রিকার গড়পড়তার একটি দেশ নয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ, রঙিন পোশাকে আবৃত অতিথিপরায়ণ মানুষের হাসিমুখ, পশুপাখির নির্ভয় আবাসস্থল, সমুদ্রসৈকতের ঐশ্বর্য, নিখাদ আনন্দে মুখর নৃত্যগীত, হস্তশিল্পের অবারিত সম্ভারের সাথে লেখক নিজ দায়িত্বে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।

‘তানযানিয়ার হৃদয় হতে’ বইটি প্রকাশ করেছে ‘অনুপ্রাণন প্রকাশন’। প্রচ্ছদ করেছেন আইয়ুব আল আমিন। অমর একুশে বইমেলায় অনুপ্রাণন প্রকাশনের স্টল নম্বর ৬৯৫-৬৯৭। এছাড়া অনুপ্রাণন প্রকাশনের কাঁটাবন ও বাংলাবাজার বিক্রয়কেন্দ্রও পাওয়া যাবে বইটি।

বিচিত্র জীবন লেখক ফাতিমা জাহানের। সদ্য পিএইচডি শেষ করেছেন ব্যাঙ্গালুরু ইউনিভার্সিটি থেকে। কৈশোর থেকেই শুরু ভ্রমণের নেশা। যে কোনো লোকালয়, যে কোনো জনপদে সেখানকার জীবনের অংশ হয়ে যেতে পারেন অনায়াসে। যাযাবর জীবন তাই বেছে নিতে হয়নি, আপনা হতেই জীবনের সাথে মিশে গিয়েছে। ভ্রমণ বিষয়ক তার অন্যান্য বই হল: ‘মাওলানা জালালউদ্দিন রুমির খোঁজে তুরস্কে’, ‘লখনউনামা’ ও ‘পাহাড় সরোবরের কাযাখস্তান’।