নিজের ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে ফিরে আসার গল্প শুনিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।
Published : 04 Feb 2025, 09:45 PM
ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতার পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর সেল্ফ এক্সামিনেশন বা নিজে নিজে পরীক্ষা করার বিষয়ে গুরুত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে এক আলোচনা সভায়।
নিয়মিত নিজে নিজে পরীক্ষা করলে আগেভাগেই আক্রান্ত হলে শনাক্ত করা ও সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব হয়।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আলোচনা সভাটির আয়োজক ছিল সেন্টার ফর ক্যান্সার কেয়ার ফাউন্ডেশন (সিসিসিএফ)।
বিশ্ব ক্যান্সার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ আলোচনা সভার শুরুতে বক্তব্য রাখেন- লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মাত্র সাত বছর বয়সে মারা যাওয়া নুরেন ফাইজা ইকরাম মুগ্ধতার মা নাজনীন সুলতানা।
সন্তানের স্মৃতিচারণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
এরপর, মুগ্ধতার পরিবারের অর্থায়নে ‘মুগ্ধতা স্মৃতি বৃত্তি' দেওয়া হয় ক্যান্সারে আক্রান্ত দুই শিশুকে। তারা হল—ফরিদপুরের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইমন হোসেন ও সাতক্ষীরার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া সুলতানা।
আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফাতেমা রেজিনা ইকবাল বলেন, “আজকের এই অনুষ্ঠানে এসে আমি খুব বিষণ্ণ হয়ে গেছি এবং একইসাথে আমি উজ্জীবিতও হয়েছি। বিষণ্ণ হয়েছি কারণ, আমার কয়েকজন কাজিন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার মধ্যে কেউ-কেউ সার্ভাইভ করেছেন। যারা করেননি আমার মনে হল আজকে যে উনারা বেশ আগেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু ওটা কাউকে বলেননি।
“নিজেরা নিজেদের মধ্যে রেখেছিলেন। যখন উনারা ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছিলেন, তখন তো উনারা লাস্ট স্টেজে। যার জন্য উনারা আর ফিরে আসতে পারেননি।”
তিনি বলেন, “অনেক নারী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, কিন্তু তারা কাউকে বলতে চায় না। নিজেরা নিজেদের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। একসময় ক্যান্সারের কাছে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া আর কোনো পথ থাকে না। তাই আমার আহ্বান, আমরা সবাই যেন নিজেরা নিজেদের পরীক্ষা করি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, “আমার মায়ের ক্যান্সার ছিল। উনি সার্ভাইভ করেছেন। তার ফলে আমি জানি এটার ওজনটা অনেক। এখানে যারা আছেন আমাদের সঙ্গে, যাদের পরিবারের সদস্যরা হারিয়ে গেছেন ক্যান্সারের কারণে, তাদের পক্ষে বোঝাটা সহজ।
“যেহেতু ক্যান্সার একবার হয়ে গেলে সব অর্থেই এটা একটা পরিবারের উপর, একটা মানুষের উপর অনেক বড়ো একটা প্রভাব রেখে যায়। এটাকে সামলানো এত সহজ নয়। সে কারণে, আগে থেকে এটা প্রতিরোধ করা জরুরি। এজন্য সেলফ এক্সামিনেশন করা গুরুত্বপূর্ণ। এতে আগেভাগে ধরা পড়ে।”
জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, “আজকে এখানে একত্রিত হওয়া এই জন্য যে আমাদের সবার দায়িত্ব এই ব্যাধিটা যাতে না ছড়ায়। আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই ভালো হয়, অনেকেই হয় না। আমাদের সংকল্প করতে হবে যে আমরা সবাই মিলে এই ব্যাধিটা নিয়ে কিছু করি। আমাদের জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করি।
“বাংলাদেশে ব্রেস্ট ক্যান্সার আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৩৪ শতাংশ মারা যায়। আজ যে পরীক্ষাটা হবে, সেটা যদি নিয়মিত করা যায়, তাহলে আগে থেকেই টের পাওয়া যায়। প্রতিরোধও করা যায়।”
আলোচনা সভায় নিজের ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে ফিরে আসার গল্প শোনান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।
আরেক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন ক্যান্সার আক্রান্তদের হাসপাতালকেন্দ্রিক না হয়ে মানুষকেন্দ্রিক হওয়ার আহ্বান জানান।
মানুষের সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবার সংযোগ ঘটানোর উপর জোর দেন তিনি। নীতি আর ব্যবস্থা পরিবর্তনের উপরও জোর দেন তিনি।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সিসিসিএফ-এর সভাপতি রোকশানা আফরোজ।
সেখানে অন্যদের মধ্যে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামিয়া মাসুদ মম।
সঞ্চালনা করেন সিসিসিএফ-এর সাধারণ সম্পাদক জাহান-ই-গুলশান শাপলা।
আলোচনা সভা শেষে হারমনি ট্রাস্টের উদ্যোগে উপস্থিত নারীদের ‘সেল্ফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশন’ (নিজে নিজে স্তন) পরীক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।