খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ; যা আগের মাসে ছিল ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ।
Published : 04 Feb 2025, 09:40 PM
চার মাস পর সাধারণ মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে এক অঙ্কের ঘরে। সেই সঙ্গে খাদ্য মূল্যস্ফীতিও কমেছে, তবে এখনও রয়ে গেছে দুই অঙ্কের ঘরে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হালনাগাদ তথ্য বলছে, বছরের শুরুর মাস জানুয়ারিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
এর মানে হল, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় মিলেছে, তা ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে কিনতে ব্যয় করতে হয়েছে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সা।
নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে সামান্য কমলেও দুই অঙ্কের মূল্যস্ফীতি নিয়েই ২০২৪ শেষ করেছিল বাংলাদেশ; ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে এই সূচক আরো কিছুটা কমেছে, তবে আগের বছরের জানুয়ারির চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশিই রয়ে গেছে।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে আসার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে শীত মৌসুমে সবজির বাজারের স্বস্তি আর খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি কমে আসার প্রবণতা।
জানুয়ারিতে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশে; যা এর আগের মাস ডিসেম্বরে ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ ছিল।
তবে খাদ্য বহির্ভূত খাতের মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়েছে। জানুয়ারিতে এ খাতে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ, যা একমাস আগেও ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ ছিল।
শহরের চেয়ে গ্রামে বেশিই রয়ে গেছে
জানুয়ারিতে গ্রামীণ পর্যায়ে সাধারণ মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ, যা ডিসেম্বরে ছিল ১১ দশমিক ০৯ শতাংশ।
আর শহর এলাকায় ডিসেম্বরের সাধারণ মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ কমে জানুয়ারিতে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন। মুদ্রা সরবরাহে লাগাম দিতে বারবার সুদের হার বাড়ানো হয়। কিন্তু নিত্যপণ্যের বাজারে সে অর্থে এখনও সুফল মেলেনি।
এর মধ্যেই সরকারের তরফে নেওয়া পদক্ষেপের সুফল মিলে মে মাস নাগাদ মূল্যস্ফীতি কমবে বলে আশা করছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত ও সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি বলেন, “রোজার সময় একটা মেজর পরিকল্পনা নেব। সেটার ফলটা এপ্রিল-মে মাসের দিকে পাওয়া যাবে।
“জুন মাসের দিকে যেটাকে আপনার আইডিয়াল সিচুয়েশন বলছেন, ৬ কিংবা ৭ শতাংশের দিকে যেতে পারে। আমার পক্ষ থেকে বলছি, মার্চের দিকে কতগুলো স্পেসিফিক অ্যাকশন দেখবেন; বিশেষ করে আর্থিক খাতকে সামনে রেখে।”
‘মৌসুমের প্রভাবকে’ মূল্যস্ফীতি কমার কারণ হিসেবে দেখছেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "শীতকালীন সবজি সরবরাহের কারণে দাম কিছুটা নাগালের মধ্যে এসেছে। মূল্যস্ফীতি কমার ক্ষেত্রে মৌসুমি প্রভাব তো আছেই।
"তবে মূল্যস্ফীতি তো মূল্যহার কমা। এটা আগে থেকেই বেড়েছিল। চালের দাম আবার কমেনি। তাই যতটা মূল্যস্ফীতি কমার কথা শীতকালীন মৌসুমে ভাবছিলাম, ততটা কমেনি।"
নানা কারণে বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে গিয়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে ঠেকে, যা অগাস্টে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশে নেমেছিল। সেপ্টেম্বরে তা আরও কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে দাঁড়ায়।
এরপর ২ দশমিক ০৭ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে অক্টোবরে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে। পরের মাসে দশমিক ৫১ শতাংশ পয়েন্ট আরও বেড়ে যাওয়ায় কষ্ট বেড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষের।
মূল্যস্ফীতি কমবে মে নাগাদ, আশা অর্থ উপদেষ্টার
দুই অঙ্কের মূল্যস্ফীতি রেখেই বিদায় নিল ২০২৪