২০২১ সালের মে মাসে কোভিড মহামারীর মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমেছিল।
Published : 07 Feb 2025, 12:12 AM
ব্যবসায়ীদের ঋণ নেওয়ার চাহিদা কমে যাওয়ায় বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশে ঠেকেছে; যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এর আগে ২০২১ সালের মে মাসে কোভিড মহামারীর মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমেছিল।
বৃহস্পতিবার বেসরকারি খাতে ঋণের হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক, তাতে দেখা যায় জুলাই আন্দোলন শুরুর পর বেসরকারি খাতের ঋণে নিম্মমুখী প্রবণতা চলছে।
যদিও সংকোচনমুলক মুদ্রানীতি, ডলার সংকটে আমদানি কমিয়ে দেওয়ায় অর্থনীতির ধীর গতির জেরে বেসরকারি খাতে ঋণের নিম্নমুখী প্রবণতা আগে থেকেই ছিল।
গত জুলাইয়ে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও সরকার পতনের মাসে অগাস্টে তা নেমে আসে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে।
পরের মাস সেপ্টেম্বরে তা আরও কমে হয় ৯ দশমিক ২০ শতাংশ, যেটি ছিল তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। নিম্নমুখী এ হার পরের মাসে কমে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৩০ শতাংশে। আর নভেম্বর মাসে আরো কমে হয় ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নভেম্বর থেকেও কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির তথ্য আছে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে। এসব তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, এত কম প্রবৃদ্ধি গত দশ বছরে কখনও হয়নি।
সরকার পতনের পর নতুন নতুন নীতিমালা, শ্রমিক অসন্তোষ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রাজনীতিকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন মামলায় আসামি করা, মূল্যস্ফীতি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ঘাটতিসহ নানা কারণে বিনিয়োগে নিম্নমুখী প্রবণতা প্রকাশ পাচ্ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় বাজারে অর্থপ্রবাহ কমিয়ে রাখার যে নীতি ঠিক করেছে, ঋণপ্রবাহের এই প্রবৃদ্ধি তারও নিচে নেমে গেল।
সংকোচনমূলক নীতি বজায় রাখার ধারায় চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ছয় মাস ধরে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানির ঋণপত্র খোলা কমেছে ৩২ দশমিক ০৪ শতাংশ। অর্থাৎ নতুন ব্যবসার জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি আগের চেয়ে কমেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে গেলে ব্যবসার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমে যাবে। সেই সঙ্গে কমবে নতুন শিল্প স্থাপন বা শিল্প সম্প্রসারণের গতি। অবধারিতভাবে তার প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানে।
প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে সিটিজেনস ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাসুম বলেন, “৫ অগাস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে ব্যবসা বাণিজ্যে এক রকমের প্রভাব পড়েছে।”
তিনি বলেন, “রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতি সম্পর্কিত; তাই দেশের অবস্থা বিবেচনা করে ব্যবসায়ীরা কম বিনিয়োগ করছেন।”
“এছাড়া সুদের হার আগের চেয়ে বেড়েছে। কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস মাথায় রেখেই ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করেন। তাই এই মুহূর্তে বিনিয়োগ কমেছে।”
অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এবিসিসিআই) সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন মনে করেন, “ব্যবসায়ীরা যখন ব্যবসা করবেন, তখনই ব্যাংক থেকে ঋণ নেবেন।
“এখন তো ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছেন না। তাই ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন না। আর ১৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়তে চান না।”
তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে কোনো রকমের বিজনেস এজেন্ডাও পাওয়া যাচ্ছে না। কীভাবে ব্যবসা করব, সে ধরনের সহায়তা সরকারের পক্ষ থেকে আশা উচিত বলে আমি মনে করি।”