এবারের বিপিএলে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে পাঁচশ রান করে আসরের সেরা ব্যাটসম্যানের স্বীকৃতি পেয়েছেন খুলনা টাইগার্সের ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ।
Published : 08 Feb 2025, 08:42 AM
টুর্নামেন্টজুড়ে রানের জোয়ার, রেকর্ড ৮টি সেঞ্চুরি, সাতশর বেশি ছক্কা, প্রায় ১২শ চার- এবারের বিপিএল ছিল ব্যাটসম্যানদের দাপটের আসর। ব্যক্তিগত পারফর্যান্সে সেখানে সবাইকে ছাড়িয়ে শীর্ষে মোহাম্মদ নাঈম শেখ। অল্পের জন্য বাংলাদেশের রেকর্ড তিনি গড়তে পারেননি। তবে চমৎকার ব্যাটিংয়ে আসরের সর্বোচ্চ রান করেছেন বাঁহাতি এই ওপেনারই।
এবারের বিপিএলে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে পাঁচশ রান করতে পেরেছেন নাঈম। তার আগে বিপিএলের এক আসরে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে পাঁচশ রান করতে পেরেছেন শুধু নাজমুল হোসেন শান্ত।
নাঈমের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের আসরে কম যাননি তানজিদ হাসানও। বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ছক্কার রেকর্ড গড়ে পাঁচশ ছুঁইছুঁই রান করেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের ওপেনার। এছাড়া রানের তালিকায় সেরা পাঁচে আছেন গ্রাহাম ক্লার্ক, তামিম ইকবাল ও এনামুল হক।
মোহাম্মদ নাঈম শেখ – ১৪ ইনিংসে ৫১১ রান
নির্দিষ্ট কিছু শটে আটকে থাকা, অতিরিক্ত ডট বল খেলার প্রবণতা, ফুটওয়ার্কে সমস্যা, বরাবরই এসবকে মনে করা হয়েছে মোহাম্মদ নাঈম শেখের ব্যাটিংয়ের বড় দুর্বলতা। চলতি বিপিএলে দারুণ ব্যাটিংয়ে সবকিছু যেন আড়াল করে দিলেন খুলনা টাইগার্সের ওপেনার।
দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে হেরে বাদ পড়া খুলনা টাইগার্সের হয়ে ১৪ ম্যাচে ৪২.৫৮ গড়ে তার সংগ্রহ ৫১১ রান, স্ট্রাইক রেট ১৪৩.৯৪। বিপিএলের আগের পাঁচ আসরে দুবার তিনশর বেশি রান করেছেন নাঈম। তবে তার স্ট্রাইক রেট আগে কখনও ১২০ পেরোয়নি।
বিপিএলের এক আসরে বাংলাদেশিদের মধ্যে নাঈমের চেয়ে বেশি রান করতে পেরেছেন শুধু নাজমুল হোসেন শান্ত। ২০২৩ সালে সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে ১৫ ইনিংসে ৫১৬ রান করেছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে লিগ পর্বের ম্যাচে ৭ চারের সঙ্গে ৮ ছক্কায় নাঈম খেলেন ৬২ বলে ক্যারিয়ার সেরা ১১১ রানের অপরাজিত ইনিংস। এছাড়া ফিফটি করেন আরও তিনটি।
বাদ পড়ার আগপর্যন্ত আসরের সর্বোচ্চ ৪৬ চারের পাশাপাশি ৩০টি ছক্কা মেরেছেন নাঈম। বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বিপিএলের এক আসরে তার চেয়ে বেশি ছক্কা শুধু তানজিদ হাসানের (৩৬)।
বিপিএলের ঠিক আগে স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে হওয়া এনসিএল টি-টোয়েন্টিতেও সর্বোচ্চ রান ছিল নাঈমের। ওই টুর্নামেন্টে ১০ ইনিংসে ৩১৬ রান করেছিলেন ঢাকা মেট্রো অধিনায়ক।
তানজিদ হাসান - ১২ ইনিংসে ৪৮৫ রান
দল হিসেবে ঢাকা ক্যাপিটালসের ব্যর্থতার আসরে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম তানজিদ হাসান। গত আসরের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এবার নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন তরুণ ওপেনার।
১২ ইনিংসে এক সেঞ্চুরির সঙ্গে চার ফিফটিতে তানজিদের সংগ্রহ ৪৮৫ রান। ৪৪.০৯ গড় ও ১৪১.৩৯ স্ট্রাইক রেটে এই রান করেছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। দল ছিটকে পড়ার আগপর্যন্ত তিনিই ছিলেন আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
সিলেট পর্বে দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে ৬ চার ও ৮ ছক্কায় ৬৪ বলে ১০৮ রান করেন তানজিদ। বিপিএলে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। সেদিন লিটন কুমার দাসের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে ২৩৯ রান যোগ করে রেকর্ড বইয়ে তোলপাড় ফেলে দেন দুজনে।
দারুণ ছন্দে থাকা আসরে ২৪টি চারের সঙ্গে ৩৬টি ছক্কা মারেন তানজিদ। প্লে-অফে উঠতে পারলে হয়তো বিপিএলের এক আসরে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডে ক্রিস গেইলকে (৪৭) ছাড়িয়ে যেতে পারতেন তিনি!
গ্রাহাম ক্লার্ক - ১৪ ইনিংসে ৪৩১ রান
টুর্নামেন্টজুড়ে ব্যাটিং গভীরতায় পিছিয়ে থাকা চিটাগং কিংসের অন্যতম ভরসার পাত্র ছিলেন গ্রাহাম ক্লার্ক। প্রথমবার বিপিএল খেলতে এসেই নজরকাড়া অবদান রেখেছেন ৩১ বছর বয়সী ইংলিশ ব্যাটসম্যান।
ফাইনাল ম্যাচে পায়ে চোট পাওয়ার পরও ২৩ বলে ৪৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন ক্লার্ক। সব মিলিয়ে ১৪ ইনিংসে ১৫৩.৩৮ স্ট্রাইক রেটে তিনি করেন ৪৩১ রান।
চট্টগ্রাম পর্বে খুলনার বিপক্ষে ৭ চার, ৬ ছক্কায় ৫০ বলে ১০১ রানের ইনিংস খেলেন ক্লার্ক। এর বাইরে আর একটি ফিফটি করেন তিনি। বড় ইনিংস আর না থাকলেও ধারাবাহিকভাবে কার্যকর ইনিংস খেলে দলকে এগিয়ে দেন ক্লার্ক।
তামিম ইকবাল - ১৪ ইনিংসে ৪১৩ রান
ফাইনালে বড় রান তাড়ায় শুরুতে ঝড় তোলেন তামিম ইকবাল। ৯ চারের সঙ্গে ১ ছক্কায় মাত্র ২৯ বলে তিনি খেলেন ৫৪ রানের ইনিংস। চলতি বিপিএলে এটি তার চতুর্থ ফিফটি।
সব মিলিয়ে ১৪ ইনিংসে ৩৭.৫৪ গড় ও ১২৯.০৬ স্ট্রাইক রেটে ৪১৩ রান করেন বরিশাল অধিনায়ক। এ নিয়ে বিপিএলের পাঁচটি ভিন্ন আসরে চারশ বা এর বেশি রান করলেন তামিম। আর কোনো ব্যাটসম্যানের তিনবারের বেশি নেই এই কীর্তি।
দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে ৪৮ বলে ৮৬ রানের অপরাজিত ইনিংস তামিমের এবারের সেরা।
গত বিপিএলে ৪৯২ রান করে তিনি হয়েছিলেন ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট। এবার অতটা রান করতে না পারলেও ম্যাচ-সেরা হলেন শিরোপা জয়ের ম্যাচে।
এনামুল হক - ১২ ইনিংসে ৩৯২ রান
পারিশ্রমিক সমস্যায় মাঠের বাইরে টালমাটাল হওয়া দুর্বার রাজশাহীকে মাঠের ক্রিকেটে বেশ ভালোভাবে এগিয়ে নেন এনামুল হক। প্লে-অফ খেলার সম্ভাবনা জাগানোর বড় কারিগর ছিলেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে ১২ ইনিংসে এক সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটিতে ৩৯২ করেন প্রথম আট ম্যাচে রাজশাহীকে নেতৃত্ব দেওয়া এনামুল। বিপিএলের সবগুলো আসর খেলা ব্যাটসম্যান এ নিয়ে দ্বিতীয়বার তিনশর বেশি রান করলেন।
খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরিতে ৫৭ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন এনামুল। কিন্তু সেদিন শেষ দিকের প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাটিংয়ে দলকে জেতাতে পারেননি তিনি।
মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার কথা জানিয়ে তাকে পরের ম্যাচ থেকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয় রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজি। সেঞ্চুরি করেও নেতৃত্ব হারানো ব্যাটসম্যান পরের চার ম্যাচের একটিও ছূঁতে পারেননি ৩৫ রানও।
এছাড়া সাড়ে তিনশর বেশি রান করেন জাকির হাসান (৩৮৯), লিটন কুমার দাস (৩৬৮), মেহেদী হাসান মিরাজ (৩৫৫) ও শামীম হোসেন (৩৫২)।