বিদেশের বদলে দেশেই এই ডি-চেক করায় ‘বিপুল অর্থ’ সাশ্রয় হয়েছে, বলছে বিমান।
Published : 06 Feb 2025, 06:47 PM
দুই যুগ পুরনো বোয়িং-৭৩৭ মডেলের একটি উড়োজাহাজের (এস-২ এএফএম) ‘ডি-চেক’ পুরোপুরি নিজেদের হাতে করেছে রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।
নিজেদের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ, প্রচেষ্টা আর অর্থ সাশ্রয়ের সেই গল্প বৃহস্পতিবার ঢাকার কুর্মিটোলায় এক অনুষ্ঠানে তুলে ধরেছে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, বিদেশের বদলে দেশেই এই ডি-চেক করায় বিপুল অর্থ সাশ্রয় হয়েছে।
পাঁচ মাস ধরে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত প্রকৌশলী ও কর্মীদের ক্রেস্ট, সনদ ও অর্থ পুরস্কারও দিয়েছে বিমান।
উড়োজাহাজ সংস্থাটির প্রকৌশল বিভাগ বলছে, কোনো উড়োজাহাজে দুই ধরনের চেক হয়। একটি ‘শিডিউল চেক’, অপরটি দুর্ঘটনাজনিত কারণে বা যেটিকে বলা হয় ‘নন-শিডিউল চেক’।
সাধারণত আট থেকে দশ বছর পর উড়োজাহাজের ধরন বুঝে ডি-চেক করতে হয়, যা ‘হেভি মেইনটেন্যান্স ভিজিট’ বা এইচএমভি নামেও পরিচিত। এটি বেশ জটিল ও ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া।
আগে সাধারণত বিদেশি উড়োজাহাজ কোম্পানি বা সংস্থা থেকে এ ধরনের চেকিং সম্পন্ন করা হলেও এবার নিজেদের সরঞ্জাম ও প্রকৌশল বিভাগকে দিয়ে করেছে বিমান।
বিমানের প্রকৌশল ও উপাদান ব্যবস্থাপনা পরিদপ্তর বিভাগের পরিচালক এয়ার কমডোর মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘ পাঁচ মাসের পরিশ্রমের পর আমরা এই এয়ারক্রাফটের ডি-চেক সম্পন্ন করেছি। সবশেষ এই উড়োজাহাজটির ডি-চেক হয়েছিল ২০১৭ সালে ইন্দোনেশিয়াতে। কিন্তু এবার আমাদের প্রকৌশল বিভাগের চেষ্টা ও বোয়িংয়ের কারিগরি সহায়তায় আমরা ডি-চেকটা সম্পন্ন করেছি।
“বিদেশে এই চেকটি করতে গেলে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা লাগত। আমার কাছে হিসাব আছে সব কিছু মিলিয়ে প্রায় ৬/৭ কোটি টাকার মত খরচ হয়েছে। এখন যে চেক সম্পন্ন হয়েছে, আশা করছি ন্যূনতম ৫ থেকে ৬ বছর এটি উড়তে পারবে।”
বিমানের প্রকৌশল সেবা ও পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী এ আর এম কায়সার জামান বলেন, “২০২৪ সালের ১৩ অগাস্ট উড়োজাহাজটির একটা শিডিউল ইন্সপেকশনের সময় ইঞ্জিনের ফ্যানের কয়েলে ক্র্যাক (চিড়) ধরা পড়ে। এরপর এটি গ্রাউন্ডেড হয়। বিমানের প্রকৌশল বিভাগ কয়েলটি নতুন কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। যার লিড টাইম ছিল তিন মাস।
“এই সময়টাকে কাজে লাগানোর জন্য উড়োজাহাজটির একটি ‘স্ট্রাকচারাল মডিফিকেশন’ শুরু করা হয়; যার টাইমফ্রেম ছিল ৪৫ দিন। এটি করার সময় মেইনফ্রেম স্ট্রাকচারে বড় ধরনের ক্র্যাক পাওয়া যায়। এরপর ২৮ অগাস্ট বোয়িংকে আইটেমটি অর্ডার করলে ৫ ডিসেম্বর ঢাকায় ডেলিভারি করে। এই সময়ে বোয়িং ডেলিভারির টাইম বিবেচনা করা গ্রাউন্ডিং পরিহার করানোর জন্য ডি-৮ চেক এর কাজ শুরু হয়।”
“এই এয়ারক্রাফটের ম্যানুফ্যাকচারিং করা হয় ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। বর্তমানে যার বয়স প্রায় ২৪ বছর। এই উড়োজাহজটি ৬১ হাজার ৬৮৩ ঘণ্টা এবং ৩৫ হাজার ১২৫ ফ্লাইট সাইকেল উড্ডয়ন করেছে। এই ডি-চেক একটি ব্যাপক ইন্সপেকশন; রিপেয়ার ও মডিফিকেশন প্রক্রিয়া। এটি উড়োজাহাজের ধরনের উপর নির্ভরশীল। এই কঠিন কাজ করতে বিশেষ অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, দৃঢ়তা ও অঙ্গীকারের প্রয়োজন।”
কুর্মিটোলায় অনুষ্ঠানে বিমানের পর্ষদ চেয়ারম্যান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী ভবিষ্যতেও এ ধরনের কাজগুলো আরও করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, “আমাদের বড় বিমানগুলোরও রঙ করতে হবে। এগুলো এখন একটু মলিন লাগে। এজন্য তিনজন প্রকৌশলীকে সিঙ্গাপুর পাঠাব প্রশিক্ষণের জন্য। যাতে তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে এই কাজটা এখানেই করতে পারেন। তাতে আমাদের সেভিংস হবে, আত্মবিশ্বাসও বাড়বে।”
পরে মুয়ীদ চৌধুরী উড়োজাহাজটির ভেতরে ঘুরে দেখেন। সেসময় বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. সাফিকুর রহমান, পর্ষদের সদস্য শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।